বর্ষায় ঘন বর্ষণ শুরু হলে বাংলায় বলি ‘মুষল ধারায় বৃষ্টি’, আর ইংরেজিতে বলি ‘রেইনিং ক্যাটস অ্যান্ড ডগস’। ‘মুষল’ শব্দের অর্থ মুগুর বা গদা। খুব জোরে পড়ার সময় বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা অনেকটা লম্বা হয়ে নামে, দেখতে মনে হয় শূন্য থেকে মুগুরের আকারে বৃষ্টি পড়ছে। তাই বৃষ্টির সঙ্গে মুষলের একটা সম্পর্ক সহজেই বোঝা যায়। কিন্তু ইংরেজিতে কেন প্রবল বৃষ্টিকে ‘ক্যাটস অ্যান্ড ডগস’ অর্থাৎ বিড়াল ও কুকুরের সঙ্গে তুলনা করা হয়?
এবার বলা যাক, এর কারণটা বেশ মজার। সেই সঙ্গে অনেক প্রাচীনও। প্রবাদটির সঙ্গে জড়িয়ে রানি এলিজাবেথের দেশ ইংল্যান্ডের নাম। সেই প্রাচীন সময়ে সত্যি বৃষ্টির সময় কুকুর বিড়াল মাটিতে পড়তো। এর একটি কারণ হতে পারে এই যে, প্রাচীনকালে ইংল্যান্ডে বৃষ্টির সঙ্গে সত্যি সত্যি বিড়াল-কুকুর পড়ত। মানে আকাশ থেকে নয়, পড়ত ঘরের ছাদ থেকে। ব্যাপারটা হলো এই যে, বাড়ীর ছাদ সাধারণত খড়ের গাদায় তৈরী হতো। রাতে উষ্ণতার সন্ধানে সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিত ইঁদুর, বিড়াল, কুকুরছানা ও অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণী। খুব জোরে বৃষ্টি হলে খড়ের ছাউনি পিচ্ছিল হয়ে যেত। তখন বৃষ্টির সঙ্গে ছাদ থেকে ওই সব বিড়াল-কুকুর পড়ত বলে লোকমুখে প্রচারিত। ধারণা করা হয়, এভাবেই বৃষ্টির সঙ্গে বিড়াল-কুকুরের বিষয়টি যুক্ত হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছে, প্রবলবেগে বৃষ্টি হলে খড়ের ছাউনী পিচ্ছিল হয়ে যেত। যার কারণে সেখানে আশ্রয় নেয়া সব প্রাণীও বৃষ্টির সঙ্গে মাটিতে আছড়ে পড়তো। যেসব প্রাণীর মধ্যে বিড়াল কুকুরের সংখ্যাই বেশী ছিল। ধারণা করা হয়, সেই কারণেই হয়তো প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে বিড়াল কুকুরের বিষয়টি জুড়ে দেয়া হয়েছে।
আবার অনেকে বলছেন, নরওয়ের পৌরাণিক কাহিনীর গল্প। তারা সেসময় বিশ্বাস করতো, বাতাসের প্রতিনিধি বিড়াল ও বৃষ্টির প্রতিনিধি কুকুর। ইংরেজী প্রবাদটির সঙ্গে জুড়ে আছে ১৬০০ শতকে এক সাংঘাতিক টর্নেডোও।
টর্নেডোর বিষয়ে অনেকে বলেন, ১৬০০ শতকে এক সাংঘাতিক টর্নেডোতে একটি গ্রামের পুকুরের সব ‘ক্যাটফিশ’ (শিং-মাগুর মাছ) ও ‘ডগফিশ’ (একজাতীয় ছোট মাছ) উড়ে গিয়ে পাশের গ্রামে পড়ে। এ রকম এক অবিশ্বাস্য ঘটনা থেকে ওই বাগধারা এসেছে বলে ধারণা করা হয়।
আবার এ রকমও হতে পারে যে, কথাটা নরওয়ের পৌরাণিক কাহিনী থেকে এসেছে। বাতাসের প্রতিনিধি বিড়াল ও বৃষ্টির প্রতিনিধি কুকুর বলে বিশ্বাস করা হতো সেখানে। এ ধরণের পৌরাণিক কাহিনী বৃষ্টির সঙ্গে বিড়াল ও কুকুরের তুলনার উৎস বলে ধারণা করা হয়।