করোনা মহামারীর মধ্যে অফিস আদালত বন্ধ থাকায় নেই ঘুষের লেনদেন। অনেকটা মাথা নেই তাই মাথা ব্যাথাও নেই অবস্থা। বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনার খারাপ দিকের মধ্যেও এটি একটি শিক্ষণীয় দিক। তবে, আগামীতে অবৈধ লেনদেন যেন মাথাচাড়া দিয়ে না উঠে সেদিকে নজর রাখতে হবে। নিতে হবে ব্যক্তিপর্যায়ে শিক্ষা।
ঘুষ না দিলে নড়েনা ফাইল, ঘুষ ছাড়া নড়েনা বস। ঘুষ দেয়া-নেয়া অঘোষিতভাবে বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছিলো দেশের সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।
ঘুষ ছাড়া কাজ না হলে বাধ্য হয়েই অবৈধ পথে পা। সাধারনও এসবে অনেকটা অভ্যস্থ হয়েই পড়েছিলো। সরকারি এমন খাত খুঁজে পাওয়া দুস্কর, যেখানে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ মিলেছে।
তবে, দিন পাল্টেছে। ঘুষ বন্ধে যখন সরকারের কঠোর পদক্ষেপেও কাজ হয়নি তখন অদৃশ্য এক ভাইরাস এটি নামিয়ে এনেছে তলানিতে। অফিস আদালত বন্ধ থাকায় কমেছে টেন্ডারবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যে ঘুষের লেনদেন। সাব রেজিস্ট্রি-অফিসেও পড়েছে করোনার প্রভাব। তাই বলায় যায়, ঘুষ লেনদেন করা ব্যক্তিরা কিছুটা হলেও অস্বস্থিতে।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যে খাতগুলোতে সরকারিভাবে বেশি অনিয়ম দুর্নীতি এবং ঘুষ লেনদেন হয়, মোটামোটি সে খাতগুলোতে সেবা এখন কিন্তু তেমনভাবে চলছে না। তবে যতটুকু চলছে তাতে অনিয়মের সংখ্যা খুবই কম বলে শোনা যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, নানা রকমের পাব্লিক সার্ভিস এবং সরকারি নিয়োগ বন্ধ হয়ে আছে বা কম হচ্ছে। ফলে এগুলোকে ঘিরে যে অনিয়মের কথা শোনা যায়, এখন সাধারণ মানুষ তার মুখোমুখী হচ্ছে না।
তবে, একেবারেই কি থেমে আছে ঘুষের কারবার? করোনার মধ্যেও সরকারি ত্রাণ বিতরনে ঘুষে লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পরবর্তী সময়ে মাথাচাড়া দিতে পারে অবৈধ লেনদেন। তাই করোনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সবার উচিত এসব লেনদেন বন্ধ করা।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অনিয়ম দুর্নীতি যাদের সব সময়ের সঙ্গি তারা কিন্তু এখনও অৎ পেতে আছে। যখন আবার সব স্বাভাবিক হবে, তারাও তাদের আগের চরিত্রের বিকাশ ঘটাবে।
ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, আমরা আশা করি আবার যখন সকল কার্যক্রম শুরু হবে তখন যেন খু কঠোরভাবে এগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়। যাতে কোন অনিয়ম না হয় এবং কাজে স্বচ্ছতা ও জাবাবদিহীতা রাখা উচিত।
ঘুষ লেনদেনের সূচকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সম্ভাবনাসহ চারটি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৮ তম। তাই বর্হি:বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় করোনা থেকেই শিক্ষা নিতে হবে। ঘুষ লেনদেনকারী অসাধু ব্যক্তিদের সামাজিকভাবে বয়কট করার পাশাপাশি অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থার ও কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই।