আতিয়া রহমান পুষ্প। জন্ম ১৯৮৯ সালে। ময়মনসিংহে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় অনার্স ও মার্স্টাস শেষ করেন। বর্তমানেও ডাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ভননেন্স স্টাডিজ এ করছেন মার্স্টাস। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন বড় কিছু হবার কিংবা নিজে কিছু করার। ছোটবেলার সেই স্বপ্ন পুরণের লক্ষ্যেই লড়ে গেছেন নিজেই।
বর্তমানে তিনি ঢাকা শহরের নাম করা একটি রেস্টুরেন্ট বিয়ে বাড়ির কর্ণধার। তবে এর পেছনে রয়েছে অনেক গল্প অনেক রুঢ বাস্তবতা। আশা, স্বপ্ন আর নানা প্রতিবন্ধকতায় তিনি পাড়ি দিয়েছেন অনেক পথ। পড়াশুনা শেষ করার আগেই বিয়ে হয় পুষ্পের। পরে ঘর সংসার আর সন্তান মানুষ করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। কিন্ত উদ্যোক্তা হবার নেশাকে কখনোই পেছনে ফেলতে পারেন নি তিনি। স্বপ্ন বাস্তব করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে ধানমন্ডিতে শুরু করেন বিয়ে বাড়ি রেস্টুরেন্টের যাত্রা, চেয়েছিলেন আর আট দশটা রেস্টুরেন্টরে থেকে আলাদাভাবে সাজাবেন তার প্রতিষ্ঠানটি। বাসায় যারা বিয়ের ঝামেলা করতে চান না কিংবা যারা আগে বিয়ে করে কখনো বর কনের স্বাদ পাননি তাদের জন্যই এই আয়োজন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার। তবে সব কিছুর উপরে তিনি চেয়েছেন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার গুলোকে তুলে ধরতে।
ঐতিহ্যবাহী খাবার এখন প্রায় অনেকটাই হারিয়ে যাবার সংকটে। বর্তমানে তরুণ সমাজ বেশী আসক্ত দেশের বাইরের খাবারের উপর, কিন্ত দেশীয় খাবারের চাহিদা যেন হারিয়েই যাচ্ছে। সেই জায়গা থেকেই যাত্রা শুরু বিয়ে বাড়ি রেস্টুরেন্টের। প্রায় তিন বছর পার হয়েছে বিয়ে বাড়ি রেস্টুরেন্টর। সবদিক মিলিয়ে একন ঢাকা শহরের প্রসিদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান বিয়ে বাড়ি। কারণটাও সোজা। যেখানে ছিল শ্রম, মেধা আর ভালোবাস। তবে একজন নারী হিসেবে ছিল অনেক বেশী চ্যালেঞ্জ। নানান মানুষের নানান কথা আর ভুল মন্তব্য ছিল প্রতিনিয়ত। কিন্ত সেসব পেছনে ফেলে পুষ্প এগিয়েয়ছেন তার গতিতে। সামাজীকভাবে প্রথমে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পিছিয়ে পড়লেও, মনোবল ছিল অটুট।
নারী হিসেবে যখন তিনি উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তখন অনেকেই বলেছিল রেস্টুরেন্ট কেন? আরও তো অনেক কিছু আছে। যেমন ফ্যাশন, পার্লারসহ আরো অনেক কিছু। তবে ক্ষেত্র নির্বাচন করেই যে শুধু উদ্যোক্তা হতে হবে এমন ভুল ধারণা ভাংতে চেয়েছিলেন এই তরুন উদ্যোক্তা তিনি। বর্তমানে আতিয়া রহমান পুষ্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন প্রায় ত্রিশ জনের মত মানুষের। যারা খুব দক্ষতার সাথে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটিতে। পুরুষ নারী কর্মী মিলে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রতিনিয়ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সামনের দিকে। কর্মীদের আবার দেয়া হয় নানা সুযোগ। ক্লাস কিংবা পরীক্ষার জন্য শিথিল করা হয় কাজ।
সামাজিক কাজের দিক থেকেও সব সময় এগিয়ে এসেছেন এই নারী। পথ শিশুদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে খাওয়ানো, বয়স্ক মানুষদের পাশে দাড়ানো কিংবা বৃদ্ধাশ্রমে পিতামাতাদের সাথে সময় কাটানো আর তাদের পাশে দাড়ানোতে আত্মতৃপ্তি খুজে পান এই তরুণ উদ্যোক্তা। খুব বেশি কিছু না তবে অল্প হলেও চান এই মানুষদের পাশে দাড়াতে। আতিয়া রহমান পুষ্প স্বপ্ন দেখেন তার প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে যাবে ঠিক তার স্বপ্নেরে মত করে। যেটি তিনি শুরুতেই দেখেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেন একজন নারী স্বপ্ন দেখতে চাইলে তা সম্ভব। তবে তার পেছনে দিতে হবে শ্রম মেধা আর ভালোবাসা। চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে যে উপরের দিকে যেতে পারবে তিনিই পরবেন রাজমুকুট। একজন নারী হিসেবে পুষ্প সবসময় চেয়েছেন দেশের জন্য কিছু করতে। আগামীতেও দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে চান এই নারী। তরুণ নারী ও উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে পুষ্প বলেন নিজেকে আগে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে তবেই দেশ ও জাতির জন্য কিছু করা যাবে। সৎ সাহস আর সৎ উদ্দেশ্য এই দুই নারীর শক্তি। তবেই আগামীতে এগিয়ে যাবে নারীরা।